চলচ্চিত্র Wiki
Advertisement

সত্যজিৎ রায়ের অভিমত[]

La Regle du Jeu-র তিন বছর পর আমেরিকায় Citizen Kane-এর আবির্ভাব হয়। এটিও ব্যবসায়িক গণ্ডীর মধ্যে তোলা এবং এটিও ছবি তোলার প্রচলিত বিধির একটি বিপ্লবাত্মক ব্যতিক্রম। অরসন ওয়েল্‌স রচিত এই ছবির ভাষায় হলিউডের গতানুগতিক ছবির ভাষা তথা মার্কিন জনসাধারণের কিছু গতানুগতিক সংস্কারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ভাব অত্যন্ত স্পষ্ট। Kane-এর কেন্দ্রস্থ চরিত্র হল একটি খাঁটি আমেরিকান আর্কি-টাইপ- যাকে বলা হয় Tycoon, অর্থাৎ এক শ্রেণীর বিশাল প্রতিপত্তিসম্পন্ন ধনকুবের। এহেন চরিত্রের প্রতি মার্কিন জনসাধারণ সচরাচর একটা শ্রদ্ধার ভাব পোষণ করে থাকেন। এ জাতীয় চরিত্রের স্বরূপ উদ্ঘাটন করে জনসাধারণের চোখ খুলে দিতে চেয়েছিলেন অরসন ওয়েল্‌স। তাঁর নির্মম বিশ্লেষণমূলক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে খাপ খাইয়ে একটি বিশেষ চিত্রভাষা তৈরী করে নিতে হয়েছিল তাঁকে। এর আগে বিশ বছর ধরে হলিউডের সবাক চিত্রে যে রীতি প্রায় সব পরিচালকরাই জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে বেদবাক্যের মত মেনে নিয়েছিলেন, তার মূল কথা হল- দর্শকদের অতিরিক্ত পীড়া না দেওয়া। দর্শকদের চোখ কান ও মন এই তিনটে সম্পর্কে একটা সজাগ সাবধানতা অবলম্বন করে হলিউডের ছবি তৈরী হয়ে আসছিল। ওয়েল্‌স অম্লানবদনে এই তিনটিকেই এক সঙ্গে আঘাত করলেন। চোখের দিক দিয়ে Kane ছবিতে লক্ষ্য করা গেল একটা রূঢ় তীক্ষ্ণতা বা Sharpness, যেটা দৃশ্যপটের রন্ধ্রে রন্ধ্রে পরিব্যাপ্ত (প্রসঙ্গতা ক্যামেরাম্যান গ্রেগ টোল্যান্ড এ-ছবিতেও deep focus ব্যবহার করেন।) হলিউডের প্রচলিত রীতিতে নায়িকার চেহারার দিকে মেকআপম্যান ও ক্যামেরাম্যানকে সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখতে হত, পাছে তার ত্বকের অমসৃণতা ক্যামেরায় ধরা পড়ে। ওয়েল্‌স তার নায়িকার ক্ষেত্রে এ রীতি মানলেন না।

কানের দিক দিয়ে ছবির সংলাপ এই প্রথম এক অপরিশুদ্ধ বাস্তব চেহারায় আত্মপ্রকাশ করল। আর মনের দিক দিয়ে দর্শক কাহিনী-বিন্যাসের এক অভিনব জটিল অথচ সংগত flashback পদ্ধতির সম্মুখীন হয়ে হিমসিম খেয়ে গেল।

Citizen Kane চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী সৃষ্টি বলে স্বীকৃত। এর পরেই ওয়েল্‌স Magnificent Ambersons ছবিতে ভাষা নিয়ে আরো অনেক নতুন পরীক্ষার পরিচয় দিলেন। নাচকীয় দৃশ্যে লেন্‌স, আলো ও দৃষ্টিকোণের বিশেষ বিশেষ ব্যবহার সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায় এ দুটো ছবিতে। কিন্তু এই দুটো ছবিই ছিল তখনকার দর্শকের পক্ষে অতিআধুনিক; ফলে দুটি ছবিই ব্যবসার বিচারে ব্যর্থ বলে প্রতিপন্ন হল, এবং ভগ্নোদ্যম ওয়েল্‌স অচিরেই Thriller-এর আশ্রয় নিতে বাধ্য হলেন। তার পরবর্তী ছবিতেও ওয়েল্‌সের আঙ্গিকগত স্বকীয়তার অনেক পরিচয় আছে, কিন্তু বিষয়বস্তুর বিচারে যে seriousness ও সমাজসচেতনতা Kane ও Ambersons-এ আছে, তার কোন লক্ষণ পরের ছবিতে নেই।

[সত্যজিৎ রায়ের “বিষয় চলচ্চিত্র” বই থেকে নেয়া] বিষয়শ্রেণী:১৯৪১ বিষয়শ্রেণী:সাংবাদিকতা বিষয়শ্রেণী:ড্রামা বিষয়শ্রেণী:ইংরেজি বিষয়শ্রেণী:অরসন ওয়েলস

Advertisement